চলতি অর্থবছরের জুলাই হতে অক্টোবর এই চার মাসে দেশে ৬৮৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। দেশে আসা এই প্রবাসী অর্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে ঢাকা জেলায়, ২৩০ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে লালমনিরহাট জেলায় যার পরিমান ৫৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য এ চিত্র তুলে ধরছে। জানা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি অন্যদিকে রংপুর বিভাগে প্রবাসী আয়ের হার সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, এই বছরের গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ কমে গিয়েছিল। অবশ্য অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আবার বৃদ্ধি পায়।
ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও প্রতি ডলারে আরো আড়াই শতাংশ হারে মোট পাচ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে দেশে পাঠানো প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৫ টাকার বেশি টাকা পাচ্ছেন। প্রতি ১০০ টাকায় ৫ টাকা বেশি পাচ্ছেন। অতিরিক্ত প্রণোদনার কারণে গত মাসে বেড়েছে প্রবাসী আয় বলে মনে করা হচ্ছে ।
আয়ে শীর্ষ পাঁচ জেলা
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলাতে। ঢাকা জেলার পরে রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। ২২৩ সালের গত চার মাসে ঢাকা জেলায় ২৩০ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে । চট্টগ্রাম জেলায় ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। সিলেটে জেলায় এসেছে ৪০ কোটি ৫১ লাখ, কুমিল্লায় ৩৮ কোটি ৭০ লাখ ও নোয়াখালী জেলায় ২২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
সব মিলিয়ে জুলাই–অক্টোবর এই চার মাস সময়ে মোট প্রবাসী আয়ের ৫৭ শতাংশই এসেছে উপরের পাঁচ জেলায়। তবে প্রবাসী আয় পাঠানো শীর্ষ দশে থাকা অন্য জেলাগুলো হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার ও নরসিংদী।
কম আয় যেসব জেলায়
চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লালমনিরহাট, রাঙামাটি, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও খাগড়াছড়ি—এই পাঁচ জেলা প্রবাসী আয় আহরনে পিছিয়ে রয়েছে। এই পাচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে লালমনিরহাটে যার পরিমান মাত্র ৫৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে, রাঙামাটিতে ৫৯ লাখ, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬১ লাখ, পঞ্চগড়ে ৭১ লাখ ও খাগড়াছড়িতে ৭৬ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
সাধারণত সামাজিক সম্পর্কের সূত্র ধরে মানুষের মধ্যে প্রবাসে যাওয়ার সুযোগ বেশি তৈরি হয় । ফলে যেসব এলাকা থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ বিদেশে রয়েছেন, সেখান থেকে কাজের জন্য প্রবাসে যাওয়ার হারও বেশি হয়ে থাকে । ফলে, ঐ এলাকায় প্রবাসী আয়ও বেশি আসতে থাকে । এই খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, প্রবাসী আয়ে পিছিয়ে থাকা প্রায় প্রতিটি জেলা জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা । অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অন্যতম কৌশল হিসেবে অভিবাসনকে দেখা হয়। ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা এসব এলাকায় অভিবাসনে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে তহবিল বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ভিসাপ্রক্রিয়া সহজীকরণের মতো উদ্যোগ যে গ্রহন করা হয় তার উপর জোড় দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এসব এলাকা থেকে অভিবাসন বাড়লে কমবে দারিদ্র্য, বাড়বে প্রবাসী আয়।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।