এখন থেকে ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ ঋণ নিতে চাইলে তার গ্যারান্টর হতে গেলে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই উচিত হবে। হবে বুদ্ধিমানের কাজ । কারণ উচ্চ আদালতের রায় মোতাবেক, গ্যারান্টররা আর মূল ঋণগ্রহীতাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে গা বাচাতে পারবেন না। মূল ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে আদালতের স্থগিতাদেশকে ব্যবহার করে সুদসহ পুরো ঋণ শোধের দায়ও এড়াতে পারবে না ঋণের জামিনদাতাগণ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক ঐতিহাসিক রায়ে, কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার তৃতীয় পক্ষীয় বন্ধকদাতা বা জামিনদাতার সম্পত্তি নিলামে তোলার পথ পরিষ্কার হয়েছে ।
ইংরেজি দৈনিক The Business Standard বিগত ১৩ মে ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত পত্রিকায় উল্লেখ করে যে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একটি আপিল নিষ্পত্তি করে বিজ্ঞ আদালত রায় দেন যে জামিনদাতাগণ রিট দায়ের করে নিলাম কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। আর সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ অনুযায়ী কোনো গ্যারান্টরের সম্পত্তি নিলামে তুলে ব্যাংকের পাওনা সমন্বয় করতে কোনো বাধা নেই।
উক্ত পত্রিকা উল্লেখ করেছে যে, বিগত ৫ বছরে জামিনদাতাগণ ১৩ হাজার ৬৪১টি রিট দায়ের করেছে যাতে করে তাদের সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে ব্যাংকের পাওনা সমন্বয় না করা হয়। আর এইসব রিটের মধ্যে ৮০ শতাংশ আদেশ গেছে রিটকারীদের পক্ষে বলে দৈনিক The Business Standard উল্লেখ করেছে। এই সময়ে দায়ের হওয়া রিটগুলোর সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ জড়িত বলে বলা হয়েছে।
ব্যাংকাররা মনে করছেন, এ রায়ের ফলে তাদের খেলাপি ঋণ আদায়ের কার্যক্রম গতি পাবে। খেলাপী ঋণ কমে আসবে। আর না জেনে না বুঝে, সহজে কেউ জামিনদাতাও হতে চাইবেন না। ফলে, ঋণ প্রদানে শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে। আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে বলা হয়,
অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ অনুযায়ী কোনো গ্যারান্টরের সম্পত্তি নিলামে তুলে ব্যাংকের পাওনা সমন্বয় করতে কোনো বাধা নেই। অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ৬(৫) ধারার ক্ষমতাবলে মূল ঋণগ্রহীতা ঋণখেলাপি হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওই ঋণের গ্যারান্টরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। আদালতের দেওয়া রায়, আদেশ বা ডিক্রি সব বিবাদীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে ও পৃথক পৃথকভাবে কার্যকর হবে।
আর ডিক্রি জারির মাধ্যমে দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আদালত প্রথমে মূল খেলাপির সম্পত্তি এবং তারপর যতটা সম্ভব গ্যারান্টরের সম্পত্তি সংযুক্ত করবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জামিনদাতা যদি খেলাপী ঋণ গ্রহীতার পক্ষে ডিক্রির দাবি পরিশোধ করে, তবে উল্লিখিত ডিক্রি যথাক্রমে তাদের অনুকূলে স্থানান্তর করা হবে এবং তারা খেলাপির বিরুদ্ধে সেটি প্রয়োগ করতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।
জামিনদারগণের যত রিট পিটিশন
২০২২ সালে বিভিন্ন ঋণের জামিনদাতাগণ ৩ হাজার ১৪৪টি রিট পিটিশন দায়ের করেন, যাতে কিনা, মূল মামলার সঙ্গে জড়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, ২০২১ সালে এমন পিটিশনের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৬২টি, মূল মামলায় জড়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে পিটিশন ছিল ২ হাজার ১১৩টি, খেলাপী হিসাবে মূল মামলার সঙ্গে জড়িত ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ঋণের জামিনদাতাগণ, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৯৭৬টি রিট পিটিশন করে, যার মূল মামলার সঙ্গে জড়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে রিট পিটিশনের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৪৬ টি, মূল মামলায় খেলাপী হিসাবে জড়িত টাকার পরিমান ছিল প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।
দৈনিক The Business Standard এ প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আপিল বিভাগের রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, গ্যারান্টরদের নতুন যেকোনো রিট হাইকোর্ট যাতে সাবধানতার সঙ্গে শুনানি করেন এবং আদেশ দেন। আর পুরনো রিটগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরো বিস্তারিত জানতে দৈনিক The Business Standard দেখুন এই লিঙ্কে